আর রাহিকুল মাখতুম তাহকিক সংস্করণ

প্রকাশক : পথিক প্রকাশন
পৃষ্ঠা সংখ্যা : 864
Cover : হার্ড বাঁধাই
Edition : 2nd Edition
ISBN : 978-984-535-005-1
বাজারে এতো অনুবাদ থাকতে কেনো এ অনুবাদটি পড়বেন? …. তবে গভীর পাঠ ও গবেষণার অভিজ্ঞতা থেকে আমরা উপলব্ধি করেছি, নবিজির জীবনের সারনির্যাস নিয়ে রচিত এই গ্রন্থটির ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা সত্ত্বেও এর অনেক বর্ণনা ও তথ্যের প্রামাণ্যতা যাচাইয়ের প্রয়োজন রয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরাও গ্রন্থটির কিছু সমালোচনা করেছেন। লেখক নিজে যদিও পরবর্তী সময়ে এতে অনেক সংশোধনী এনেছেন, তথাপি গ্রন্থে অনেক ভুলভ্রান্তি রয়ে গেছে, যেগুলো নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সিরাতে স্থান পাওয়া অনুচিত। এই প্রেক্ষাপটে শাইখ আবু আবদির রহমান মাহমুদ ইবনু মুহাম্মাদ আল-মাল্লাহ আত তালিক আলার রাহিকিল মাখতুম নামে একটি গুরুত্বপূর্ণ তাহকিকগ্রন্থ রচনা করেন। গ্রন্থটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৪৩১ হিজরি মোতাবেক ২০১০ সালে, মিশরের ইস্কান্দারিয়্যার দারুল আলামিয়্যা প্রকাশনী থেকে। এরপর ১৪৩৮ হিজরি মোতাবেক ২০১৭ সালে সৌদির দারুত তাদমুরিয়্যা প্রকাশনী থেকে এর নতুন আরেকটি সংস্করণ বের হয়। সেই গ্রন্থে তিনি আর রাহিকুল মাখতুম-এর ওপর মূলত নিম্নোক্ত কাজগুলো করেন— ক. শুরুতে আর রাহিকুল মাখতুম-এর যে সংস্করণগুলো বের হয়েছিল, সেগুলোতে অনেক ভুল ছিল। এই গ্রন্থের ভূমিকায় লেখক নিজেও সেই কথাটি বলেছেন। গ্রন্থাকারে প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ১৩৯৯ হিজরি মোতাবেক ১৯৭৯ সালে। বের হওয়া মাত্রই এর প্রথম মুদ্রণের দশ হাজার কপি হাতে হাতে নিঃশেষ হয়ে যায়। পরে লেখকের তত্ত্বাবধানে ১৯৯৪[[1]] সালে ‘দারুল ওফা’ থেকে এর পরিমার্জিত সংস্করণ বের হয়। সেই সংস্করণে তিনি কিছু সংযোজন ও বিয়োজন করেন। টীকায় পরবর্তীদের লিখিত গ্রন্থের পরিবর্তে পূর্ববর্তীদের লিখিত গ্রহণযোগ্য উৎসগ্রন্থ ও হাদিসগ্রন্থের উদ্ধৃতি দেন। কিছু জায়গায় বিন্যাসে পরিবর্তন আনেন। তথ্যগত কোনো ভুল থাকলে সেটা ঠিক করেন।[[2]] যেমন পুরাতন সংস্করণে ‘দারুন নাদওয়ায় কুরাইশ নেতাদের এক গোপন বৈঠক’ শিরোনামে নজর ইবনুল হারিস সম্পর্কে বলা হয়েছিল, ‘এ হলো সেই ব্যক্তি যে নবিজির ওপর নাড়িভুঁড়ি নিক্ষেপ করত’–এই তথ্যটি ভুল ছিল। তাই নতুন সংস্করণে লেখক সেটা বাদ দিয়েছেন। কারণ সঠিক তথ্য হলো, বুখারিও মুসলিমের রিওয়ায়াত অনুযায়ী নবিজির ওপর নাড়িভুঁড়ি নিক্ষেপকারী সেই ব্যক্তিটি ছিল উকবা ইবনু আবি মুআইত (عُقْبَةُ بْنُ أَبِي مُعَيْطٍ)। পুরো বইয়ে তিনি কী কী পরিবর্তন ও সংশোধনী এনেছেন, প্রতিটা ধরে ধরে শাইখ মাহমুদ আল-মাল্লাহ দেখিয়েছেন এবং সেগুলোর শুদ্ধতা যাচাই করেছেন। এই কাজটি করতে গিয়ে শুরুতেই উনি যেই কথাটি বলেছেন, তা হুবহু আমরা এখানে তুলে ধরছি, ‘আর রাহিকুল মাখতুমের পুরনো সংস্করণে[[3]] কিছু ভুল ছিল। লেখক (রাহিমাহুল্লাহ) তা নতুন সংস্করণে[[4]] সংশোধন করেছেন। আমি এখানে সেসব উল্লেখ করব এবং সংশোধনের ব্যাখ্যাও দেব, যাতে লেখকের নিজের সংশোধিত মতামতের পরও তাঁর প্রতি সেই পুরনো ভুলগুলো আর আরোপিত না হয়। একই সঙ্গে যাদের কাছে পুরনো সংস্করণ রয়েছে তারা যেন তা সংশোধন করে নিতে পারেন। এখানে আমার মন্তব্য সাধারণত লেখকের বক্তব্যের উপরই সীমাবদ্ধ থাকবে।[[5]] খ. বর্ণিত হাদিসগুলোর মান যাচাই করেছেন এবং সেসব শব্দ ও বাক্যও চিহ্নিত করেছেন, যেগুলো নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবিদের প্রসঙ্গে ব্যবহার করা সমীচীন নয়। উদাহরণস্বরূপ ১৪৭ নং টীকাটি আপনারা পড়ে দেখতে পারেন। গ. গ্রন্থে বর্ণিত এমন অনেক ঘটনা আছে, যেগুলো সিরাত ও মাগাজির গ্রন্থগুলোতে খুব মাশহুর বা প্রসিদ্ধ হলেও সহিহ না। যেমন বিখ্যাত সাহাবি হামজা ও উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমার ইসলাম গ্রহণের পিছনের ঘটনা। তারপর হিজরতের সময় নবিজি ও আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুর গুহার ভেতরের ঘটনা। এমন আরও অনেক ঘটনা। ভুল ও অগ্রহণযোগ্য সেসব ঘটনাবলি তিনি তুলে ধরেছেন। ঘ. তাহকিকে একটি নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন। এই ক্ষেত্রে হাফেজ ইবনু হাজার, ইমাম জাহাবি, আল্লামা ইবনু কাসিরের মতো পূর্ববর্তী অনেক ইমাম ও সিরাত গবেষকের বক্তব্য তুলে ধরার পাশাপাশি পরবর্তীদের মধ্যে শাইখ আলবানি, ড. আকরাম জিয়া আল উমারি, মুহাম্মাদ ইবনু আব্দিল্লাহ আল আওশান প্রমুখের বক্তব্য যথাসম্ভব তুলে ধরেছেন। মূল গ্রন্থ অনুবাদের ক্ষেত্রে আমরা মাহমুদ আল-মাল্লাহর সেই তাহকিকি গ্রন্থটিকে সামনে রেখেছি এবং সেখান থেকে তাহকিকগুলো তুলে ধরেছি। যদিও সেই গ্রন্থে তাহকিকি আলোচনা দীর্ঘ ও বিস্তারিত, পাঠকের স্বাচ্ছন্দ্য ও বইয়ের কলেবর বিবেচনায় আমরা অনেক ক্ষেত্রে সংক্ষিপ্তভাবে কেবল রায়টুকু উপস্থাপন করেছি। তবে প্রয়োজনে কোথাও কোথাও রিওয়ায়াতের দুর্বলতার পেছনের সুস্পষ্ট কারণও উল্লেখ করেছি। বিভিন্ন স্থানের নামের সঠিক উচ্চারণ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে আমরা আতিক ইবনু গাইসের মুজামুল মাআলিমিল জুগরাফিয়্যাহ ফিস সিরাতিন নাবাবিয়্যাহ গ্রন্থটি সামনে রেখেছি। অনুবাদের ক্ষেত্রে আমরা ‘দারুল ওফা’ থেকে ১৪৩১ হিজরি মোতাবেক ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত একুশতম সংস্করণ এবং ‘দারু ইবনিল জাওযি’ থেকে ১৪৪৪ হিজরি মোতাবেক ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত সংস্করণটির উপর নির্ভর করেছি। দারুল ওফার এই নুসখাটি লেখকের অনুমোদিত ও তাঁর তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত। সংস্করণের শেষে লেখকের একটি অনুমোদনপত্রও ছাপা আছে। স্থান, নাম ও ব্যাকরণে শুদ্ধতা, হরকতের নির্ভুল প্রয়োগ—এসব কারণে ‘দারুল ওফা ও দারু ইবনিল জাওযি সংস্করণ’ আমাদের কাছে অধিক গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে।
Price: 450.00 ৳ 900.00 ৳